ROOMS & SUITES
All 53 luxurious guest rooms, the fine teak wood-furnishing decoration. Feel the unique comfort in all feature the rigorous decorations and finest facilities to enhance your living experience.
খাগড়াছড়ির দর্শনীয় স্থান

খাগড়াছড়ি, যেখানে শীতল জলের হৃদ ঘুমিয়ে থাকে পাহাড়ের কোল ঘেষে, আপন মনে ছলাৎ ছলাৎ শব্দে বয়ে চলে নদী, নীল আকাশ চুমু আঁকে পাহাড়ের বুকে, কবিতার ভাষায় কথা বলে প্রকৃতি, চারপাশ যেন জলরঙে আঁকা ছবি, বাতাসে সুন্দরের সুর, বাহারী রঙের প্রজাপতি ওড়াওড়ি করে সবুজ দিগন্তে, জোনাকি দীপ জ্বালে রাতের আঁধারে। প্রাকৃতিক নৈসর্গিক এই জেলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অনেক অনেক ভ্রমণস্পট। খাগড়াছড়ি জেলার দর্শনীয় স্থান তুলে ধরা হল:-


আলুটিলা


ঐশ্বর্যময় অলংকৃত সৌন্দর্য্যে মনকাড়া খাগড়াছড়ি শহরের প্রবেশমুখেই চোখ পড়ে অন্যতম এক পর্যটন স্পট। যার রূপে মুগ্ধ হয়ে কলমের কালি বেয়ে নেমে এসেছিল, ‘ক্লান্ত পথিক ক্ষণেক বসিও আলুটিলার বটমূলে/নয়ন ভরিয়া দেখিও মোরে চেঙ্গী নদীর কোলে।’ চরণ দুটি পড়েই হয়তো আন্দাজ করে ফেলেছেন কোন স্থানের কথা বলছি। জ্বি, এটিই আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র, যা খাগড়াছড়ি শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে আলুটিলা পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত। আলুটিলা টিলা হলেও এটি জেলার সবচেয়ে উঁচু পর্বত বা পর্বতশ্রাণী। আগে যার নাম ছিল আরবারী পর্বত। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ৩ হাজার ফুট উচ্চতার এই পর্বতে আকাশ, পাহাড় ও মেঘের মিতালী মায়াময় আবহ তৈরি করে।

এখানকার আকর্ষণীয় ও ভ্রমণপ্রেমীদের মন কেড়ে আলুটিলা সুড়ঙ্গ বা আলুটিলা গুহা কিংবা রহস্যময় গুহা। পাশাপাশি এখানে রয়েছে গুহায় প্রবেশ পথে সিঁড়ি, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, বিশ্রাম কক্ষ ও বসার সু-ব্যবস্থা। আলুটিলা পাহাড়ের চূড়া থেকে দর্শনকৃত বৃক্ষ শোভিত পাহাড়, চেঙ্গী নদীর বয়ে চলা, শহরের ছোটখাটো ভবন ও আকাশের আল্পনা যে কারো মনকে ভরিয়ে তুলে অপার্থিব মুগ্ধতায়। পর্যটকদের নিরাপত্তায় রয়েছে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পও। উপমহাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক এই সুড়ঙ্গ বা গুহা খাগড়াছড়ির অন্যতম প্রধান আকর্ষণীয় ভ্রমণ স্থান।

আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের আকর্ষণীয় ও রহস্যময় গুহা স্থানীয়দের কাছে দেবতার গুহা বা মাতাই হাকড় নামে পরিচিত হলেও অনেকের কাছে আলুটিলা সুড়ঙ্গ বা আলুটিলা গুহা কিংবা রহস্যময় গুহা হিসেবেই পরিচিত। পাহাড়ের চূড়া থেকে দুইশত ছেষট্টি সিঁড়ির নিচে পাথর ও শিলা মাটির ভাঁজে এর অবস্থান। প্রায় ১৮ ফুট ব্যাসের গুহামুখ ও ২৮০ ফুট দৈর্ঘ্যের এই সুড়ঙ্গের প্রবেশমুখ ও শেষাংশ আলো-আঁধারিতে আচ্ছন্ন। নিকষ অন্ধকার সুড়ঙ্গের তলদেশে বয়ে চলা শীতল জলের ঝর্ণাধারা। একইসাথে গুহাটি ভয়সংকুল ও রোমাঞ্চকর অনুভূতির। দশ-পনেরো টাকার মূল্যের মশাল হাতে গুহার একদিক দিয়ে প্রবেশ করে অন্যদিক দিয়ে বেরুতে প্রায় বিশ মিনিটের মতো সময় লাগে।

হোটেল অবকাশ থেকে বাস, সিএনজি বা ট্যাক্সিযোগে সহজেই আলুটিলা গুহায় যেতে পারবেন।


রিসাং ঝর্ণা


এই ঝর্ণার বয়ে চলার বয়স ঠিকঠাক না জানা গেলেও ভ্রমণপ্রেমীরা ২০০৩ সালে এটি খুঁজে পায়। এরপর থেকেই ভ্রমণের আকর্ষণীয় এক স্পট হয়ে ওঠেছে রিসাং ঝর্ণা। এখানে পাশাপাশি রয়েছে দুটি ঝর্ণা, একটি থেকে অন্যটির দূরত্ব প্রায় ২০০ গজ। ভ্রমণপিপাসুদের কথা বিবেচনা করে এই ঝর্ণায় যাওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে পাকা সিঁড়ি। প্রায় ৩০ মিটার উঁচু থেকে আঁছড়ে পড়া এই ঝর্ণার পানি পাহাড়ের প্রায় ১০০ ফুট উপর হতে নিচে পড়ে। সেখান থেকে পুনরায় আরো ১০০ ফুট পাথরের ওপর গড়িয়ে নামে সমতলে। এটি
খাগড়াছড়ির সদর থেকে ৯ কিলোমিটার, হোটেল অবকাশ থেকে ৮ কিলোমিটার ও আলুটিলা গুহা থেকে ২ কিলোমিটার দূরে মাটিরাঙ্গায় অবস্থিত। এখানে খুব সহজেই  জীপ, প্রাইভেটকার, লোকাল বাস, সিএনজি, মাইক্রোবাসের মাধ্যমে যাওয়া যায়। মূল সড়কের পাশ থেকে ২ কিলোমিটার হেঁটে ঝর্ণার পাদদেশে যেতে পারেন। হাঁটতে না চাইলেও অসুবিধা নেই। বাইক, নিজস্ব গাড়ি বা রিজার্ভ চাঁদের গাড়িতে চড়েও যাওয়া যায় একেবারে ঝর্ণার পাদদেশে।

 

নিউজিল্যান্ড পাড়া


নিউজিল্যান্ড পাড়া নামটা শুনেই হয়তো মনে খটকা লেগেছে। ভাবছেন, এখানে হয়তো বসবাস করেন ঐদেশের নাগরিক। কিন্তু ঠিক তা নয়। এটি খাগড়াছড়ির দক্ষিণের পানখাইয়া পাড়ার পাশের একটি পাড়া। যা মূলত পানখাইয়া পাড়া এবং পেরাছড়ার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত। এছাড়া পানখাইয়া পাড়া থেকে আপার পেরাছড়া গ্রামের দিকে যাওয়া রাস্তাটাও নিউজিল্যান্ড সড়ক নামে পরিচিত। এই এলাকাটি খাগড়াছড়ির একমাত্র সমতল ভূমি হিসেবে খ্যাত।

এখানকার রাস্তার দুপাশে দিগন্ত জোড়া সবুজ শস্যখেত, কিছু এলাকা ফাঁকা, ওপরে সুনীল আকাশ, কখনো কখনো শুভ্র মেঘ, দূরে ঝিরঝির শব্দের ঝর্ণা, দূরে কিছু বাড়িঘর, আরও দূরে পাহাড়ের সারির মিতালি, অস্তমিত সূর্যের আভা এক নান্দনিক সৌন্দর্যময়িআবহ তৈরি করেছে। সেজন্যই এটি ভ্রমণপ্রেমীদের নজর কেড়েছে। 
হোটেল অবকাশ থেকে সিএনজি বা অটোরিকশায় চড়ে নিউজিল্যান্ড পাড়ায় যাওয়া যায়।


হর্টিকালচার পার্ক


এ জেলার জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে সবুজ বেষ্টনীতে ঘেরা হর্টিকালচার হ্যারিটেজ পার্ক অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পর্যটকদের করেছে আকর্ষণ। এটি জেলা শহরের জিরোমাইলে ২২ একর পাহাড় জুড়ে বিস্তৃত। এই পার্কে চমৎকার ঝুলন্ত ব্রিজ, বিশাল লেক, ফুলের বাগান, বিভিন্ন প্রজাতির ফলবৃক্ষ, দোলনা, ওয়াচ টাওয়ার, কিডস জোন, কৃত্রিম হ্রদ, পিকনিক স্পট, গেস্টহাউজ, হলরুম, স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী খাবার, বার্ডস পার্ক সহ ওপেন স্টেজে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সুযোগ রয়েছে।

এখানে যাওয়া খুবই সহজ। যে কেউ খাগড়াছড়ি শহরের হোটেল অবকাশ থেকে  অটোরিকশা, মোটর সাইকেল, রিকশায় চড়ে খুব সহজে যাওয়া যায় হর্টিকালচার পার্কে।

 

স্বর্গের সিঁড়ি


পেরাছড়ার ত্রিপুরা অধ্যুষিত দুর্গম এলাকা মায়ুং কপাল পাড়া। প্রাকৃতিকভাবে এই পাহাড়টি হাতির অবয়বে গড়ে ওঠায় ‘হাতির মাথা’ হিসেবেই স্থানীয়দের কাছে পরিচিত। এছাড়া ৩০৬ ফুট দৈর্ঘ্যের (প্রায় তিনশত সিঁড়ি) সিঁড়ি বেয়ে উঁচুতে উঠতে হয় বলে ‘স্বর্গের সিঁড়ি’ নামেও পরিচিত। এখান থেকে এই জেলার সুউচ্চ পাহাড়ের সৌন্দর্য বেশ উপভোগ্য। অনেকটা পাখির চোখে খাগড়াছড়ি শহর দেখার মতো। পাশাপাশি শীতল বাতাস, পাখির কলতান আকৃষ্ট করেছে পর্যটকদের। ‘এদোশিরা মোন’  নামক এই পাহাড়টি সদর ও মাটিরাঙ্গা উপজেলা সীমানায় অবস্থিত।

পেরাছড়া ইউনিয়নের মেইন রোড দিয়ে সবধরনের স্থানীয় যানবাহনে সহজে যাওয়া যায় হাতিমাথা বা স্বর্গের সিঁড়িতে। এছাড়া খাগড়াছড়ি-পানছড়ি রাস্তা ধরে সিএনজি, মাহিন্দ্র,ইজি বাইকে পেরাছড়া। সেখান থেকে চেঙ্গী নদী পেরিয়ে স্বর্গের সিঁড়ি।

 

দেবতা পুকুর


একটি পুকুর, যেখানকার পানি কখনোই শুকিয়ে যায় না। স্থানীয়রা মনে করেন এটা দেবতার আর্শীবাদ, যা স্বয়ং জলদেবতা স্থানীয় বাসিন্দারদের জলতৃষ্ণা নিবারণের জন্য খনন করেন। এটি প্রায় ৭০০ ফুট উপরে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত, যেখানে যেতে পাড়ি দিতে হয় ১৩৮৬টি সিঁড়ি। চৈত্র সংক্রান্তিতে ত্রিপুরা সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ সহ শিশুরা এটি দর্শন করে। কারণ তাদের ধারণা, এখানে স্নান করলে মনোবাসনা পূরণ হবে। এই পুকুরের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫০০ফুট ও প্রস্থ প্রায় ৬০০ফুট।

পুকুর ও দেবতা কিংবা দেবতা ও পুকুর যেহেতু উচ্চারিত হচ্ছে, সেহেতু ভ্রমণপ্রেমীরা বুঝে গেছেন কোন স্থানের কথা বলছি। জি, এটি দেবতা পুকুর। যা নুনছড়ির ত্রিপুরা নামের এক স্থানে ৫ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। এটি সদর থেকে ১২ কিলোমিটার ও মাইসছড়ি থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

খাগড়াছড়ি-মহালছড়ি-রাঙামাটি সড়কে ৭ কিলোমিটার পর মাইচছড়ি। সেখান থেকে ৪ কিলোমিটার পশ্চিমে নুনছড়ি। এরপর প্রায় ১ কিলোমিটার পাহাড়ি পথের পর দেবতা পুকুর। খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটির লোকাস বাসযোগে মাইসছড়ি গিয়ে বাকী পথ পায়ে হেঁটে কিংবা সিএনজি, চাঁদের গাড়ি বা নিজস্ব গাড়িতে নুনছড়ি গিয়ে বাকী পথ পায়ে হেঁটে যেতে হবে।


মায়াকানন ও মায়াবিনী লেক


চেঙ্গী নদীর কূল ঘেঁষে ও পানছড়ি উপজেলা পরিষদ এলাকার মাঝামাঝিতে একটি বিনোদন কেন্দ্র অবস্থিত, যার নাম ‘মায়াকানন’। বিশাল মাঠে বিকেলে চলে ক্রীড়া কৌশল, পাশেই দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা মডেল মসজিদ। বিশেষ করে গাছের ওপর তৈরি ছোট ছোট ঘরগুলোতে সন্ধ্যায় জ্বলে ওঠা হারিকেনের নিবু নিবু আলো দর্শনার্থীর দৃষ্টি কাড়ে। রয়েছে তুলির আঁচড়ে সেজে ওঠা বসার আসন, বাহারি আলপনায় সজ্জিত অর্ধ শতাধিক সিঁড়ির পুকুর ঘাট, শিশুদের দোলনা, জলে ভেসে বেড়ানো হাঁসের নৃত্য, স্বচ্ছ জলে বড়োসড়ো মাছ, পাহাড়ের মাঝে হ্রদ, হ্রদের মাঝে টিলা, টিলাগুলোতে তৈরি গোলঘর বিশ্রামাগার, গোলঘর থেকে পাহাড়ে যাওয়ার প্রাকৃতিক বাঁশের সাঁকো, হ্রদে ঘুরার জন্য নৌকা এবং অরণ্যঘেরা সবুজের সমারোহ।

এটি পানছড়ি উপজেলাধীন ভাইবোনছড়ার কংচাইরি পাড়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর পাহাড়ের উঁচু-নিচুতে অবস্থিত। এখানে যেতে চাইলে খাগড়াছড়ি থেকে মাহিন্দ্র, সিএনজি বা অটোরিকশায় পানছড়ির ভাইবোনছড়া বাজার। সেখান থেকে পশ্চিম দিকে মিনিট পাঁচেক হাঁটলেই কংচাইরী পাড়ায় মায়াবিনী ও মায়াকানন লেক।


অরণ্য কুটির


সৌন্দর্যমন্ডিত পানছড়ি উপজেলাধীন শান্তিপুরে ১৮০ একর বিশাল জায়গাজুড়ে গাছগাছালিতে আবৃত এক ভ্রমণস্থান ‘অরণ্য কুটির’। যদিও অনেক পর্যটকের কাছে শান্তিপুর অরণ্য কুটির, বুদ্ধমন্দির বা বুদ্ধমূর্তি হিসেবেও পরিচিত। অনেকের ধারণা, ঘন সবুজ অরণ্যের ছায়া সুনিবিড় সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি এবং ধ্যান সাধনার পীঠস্থান বলে এর নাম ‘অরণ্য কুটির’। এটি দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ ও বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বুদ্ধ মূর্তি। শৈল্পিক রূপ রঙে মনকাড়া সৌন্দর্য্যের তুলিতে সাজানো এটি পূণ্যময় তীর্থস্থানও। কারণ রূপ মাধুর্য্যের পাশাপাশি এটি পুরো বাংলাদেশী বৌদ্ধদের ধর্মীয় অনুভূতির আকাশে দেদীপ্যমান এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। এখানকার উল্লেখযোগ্য স্থাপনার মধ্যে সাড়ে ৪৮ ফুট উচ্চতার বুদ্ধমূর্তি, ৮০ হাত দৈর্ঘ্যের ভোজনালয়, ৪০ হাত দৈর্ঘ্যের দেশনাঘর, হাসপাতাল, মৈত্রী ভবন, সুদৃশ্য শ্রামনশালা ও ভিক্ষুশালা অন্যতম। যদিও এখানে পঁচিশের বেশি কুটির এবং উপকুটিরও রয়েছে। এছাড়া তৈরি করা হয়েছে দুটি কৃত্রিম হ্রদ এবং বনায়ন তৈরি জন্য রোপণ করা হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার বৃক্ষ।


তৈদুছড়া ঝর্ণা


স্থানীয় ভাষায় তৈদু অর্থ জানালা বা পানির দরজা এবং ছড়া অর্থ ঝর্ণা। সেক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দারা (বিশেষত ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী) এটিকে ‘তৈদুছড়া’ নামে ডাকেন, তাই এর আশেপাশে গড়ে উঠা বসতির নাম তৈদুপাড়া। যদিও পর্যটকদের কাছে এটি ‘তৈদুছড়া ঝর্ণা’ নামেই পরিচিত। আঁকাবাঁকা, উঁচু-নিঁচু পাহাড়ি মেঠো পথে পায়ে হেঁটে যেতে হয় পার্বত্য জেলার সবচেয়ে বড় এই ঝর্ণায় বা জলপ্রপাতে। এটি দীঘিনালাধীন জামতলির পোমাংপাড়া থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। চার ঘন্টা পায়ে হাঁটা পথের সঙ্গি চোখজুড়ানো নীল আকাশ, সবুজ পাহাড়, সাদা কুয়াশার মেঘের মোহ, পাহাড়ের বুকে জেগে ওঠা ছোট ছোট ঘর। সবমিলিয়ে বিমুগ্ধ করে তুলে ভ্রমণের মুহূর্তকে।

এখানে দুটি ঝর্ণা রয়েছে। প্রায় তিন ঘন্টা পায়ে হাঁটার পর দেখা মিলে প্রথম ঝর্ণার, যা প্রায় ৬০ ফুট উঁচু। এর ঝর্ণাধারা পাহাড় বেয়ে মিলেছে ছোট একটি হ্রদে। এর ডানপাশ ধরে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উঠলে প্রায় ১ ঘন্টার মধ্যে দেখা মিলে দ্বিতীয় ঝর্ণার। এটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে ও শীতল জলে নিজেকে প্রশান্তির বার্তা দিতে প্রায় ৮৫ ডিগ্রি এঙ্গেলের ঢাল বেয়ে প্রায় ১০০ ফুট ওপরে উঠে দ্বিতীয় ঝর্ণার ঝিরি পথের দেখা মিলে। পাশাপাশি দেখা যায় প্রথম ঝর্ণার ঝর্ণামুখ, যেখান থেকে পানি পড়ছে পাহাড়ের গায়ে।

অপূর্ব ও নয়নাভিরাম দ্বিতীয় ঝর্ণাটি প্রায় ৮০ ফুট উঁচু। ঝর্ণার পানি সরাসরি পড়া স্থানে সিড়ির মত রয়েছে পাথরের ধাপ। সে ধাপ বেয়েই নিচে গড়াচ্ছে পানি, পর্যটকরা উপভোগ করে স্নান।

এখানে বছরব্যাপী পানির প্রবাহ থাকলেও শীতে কিছুটা কমে আসে। তাই বর্ষার শেষ ও শীত শুরুর আগ মুহূর্তে এটি উপভোগ করার উপযুক্ত সময়। এর আশেপাশে সবুজের সমারোহ, পাহাড়ের জুম চাষ দেয় বাড়তি সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ। পাশাপাশি এখানকার আদিবাসীদের আথিতেয়তা, পরিচয়, আলাপচারিতা ভ্রমণকে পূর্ণতা এনে দেয়।

এখানে যেতে হবে প্রথমে ঢাকা বা অন্যান্য জেলা শহর থেকে স্থল ও আকাশ পথে খাগড়াছড়ি আসতে হবে। তবে সবচেয়ে উপযুক্ত মাধ্যম সরাসরি বাসযোগে ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি। এরপর জীপে করে জামতলি বাজার। সেখান থেকে ইজি বাইকে মাস্টারবাড়ি বা তৈদুছড়া ঝর্ণা। রোড ম্যাপ: ঢাকা > খাগড়াছড়ি  >  জামতলি বাজার  >  তৈদুছড়া ঝর্ণা।


ফুলকলি

 

এই জেলা মহকুমা থাকাবস্থায় দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় যাতায়াতের জন্য ছিল না রাস্তাঘাট। সেজন্য যাতায়াতের বিকল্প পথ হিসেবে মহকুমা প্রশাসক পরিবহনপুলে সরকারিভাবে লালন-পালন করতেন হাতি। যাতায়াতে সাহায্যকারী সর্বশেষ হাতির নাম ছিল ফুলকলি, ১৯৯০ সালের ২৭ জুলাই যার মৃত্যু হয়। এরপর পর্যটকদের সামনে হাতির পিঠে চড়ে প্রশাসনিক কাজ সম্পাদনার ঐতিহ্য তুলে ধরতে জেলা প্রশাসক নির্মাণ করেন হাতি ফুলকলির সমাধিসৌধ। এটি এখন এই জেলার বৈশিষ্ট্যমন্ডিত একটি পর্যটন স্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী ও ফুলকলির ইতিহাস সমৃদ্ধ সমাধিটি জেলা শহরের প্রবেশমুখে স্থাপিত। রাজধানী ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন বা আকাশপথে প্রথমে যেতে হবে খাগড়াছড়ি। এরপর সিএনজিতে চড়েই যেতে পারেন জেলা শহরের প্রবেশমুখে।

 

রামগড় চা বাগান

 

সীমান্ত শহর রামগড় প্রবেশ মুখেই সুবিশাল এক সবুজাভ বাগান, যা রামগড় চা বাগান নামে খুব পরিচিত। যদিও এর অবস্থান ফটিকছড়ি উপজেলায়। এই চা বাগানের বুক চিরে ফেনী খাগড়াছড়ি রাস্তাটি পৌঁছেছে রামগড়। প্রতিনিয়ত এই রাস্তা ধরে যাতায়াতকারী যাত্রী সহ পর্যটকরা চা বাগানের শান্ত সবুজাভ সৌন্দর্য উপভোগ করেন মনপ্রাণ ভরে। পাশাপাশি বিশাল প্রাকৃতিক এক লেকও উপভোগ করেন, যেখানে শীতের মৌসুম অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত থাকে। চা বাগান ও লেক উপভোগ করতে চাইলে প্রথমে রাজধানী ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন বা আকাশপথে যেতে হবে খাগড়াছড়ি। সেখান থেকে রামগড় বাজার। এরপর অটোরিকশা, বাইক বা সিএনজিতে চড়ে অল্প সময়েই চা বাগান।

 

মং রাজবাড়ি

 

খাগড়াছড়ি জেলাধীন মানিকছড়ি উপজেলার মং সার্কেলের রাজার প্রাচীন রাজবাড়ি, মং রাজার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও রাজত্বকালীন স্থাপত্য এখন অন্যতম এক দর্শনীয় স্থান হিসেবে বেশ পরিচিতি পেয়েছে। যে রাজবাড়ির সাথে রাজার সিংহাসন সহ অস্ত্রশস্ত্র ও প্রত্নতাত্ত্বিক অনেক অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। যদিও অসংরক্ষণ ও অব্যবস্থাপনায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে স্মৃতি। এটি মানিকছড়ি সদর উপজেলায় অবস্থিত।
এই উপজেলায় (মানিকছড়ি) কংজয়ের (১৭৯৬-১৮২৬) রাজত্বের মাধ্যমে মং রাজার কার্যক্রম আরম্ভ হয়। মং রাজত্বে মং প্রু সাইন (সপ্তম রাজা, ১৯৫৪-১৯৮৪) রাজা থাকাবস্থায় রাস্তাঘাট সহ প্রজাদের সুখদুখে বেশ অবদান রাখেন। ১৯৭১ সালে ১১ নম্বর সেক্টরে তিনি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু বিরূপ পরিস্থিতিতে জীবন রক্ষার্থে একসময় স্ত্রী, মেয়ে, নাতি-নাতনিদের নিয়ে পাড়ি জমান ভারত। সেসময় মাটির নিচে চাপা দিয়ে যায় রাজকীয় স্বর্ণালঙ্কার সহ গুপ্তধন। দেশ স্বাধীনের পর মাটি ও মানুষের টানে ফের ফিরেন মানিকছড়ি রাজপ্রাসাদে। কিন্তু স্বর্ণলঙ্কার, গুপ্তধন খুঁজে পায় না। দেশের তরে জীবনবাজী রাখা এই রাজা ১৯৮৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন। রাজধানী ঢাকা থেকে বাসযোগে যাওয়ার সময় চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের মানিকছড়ি আমতল বা মহামূনিতে নামুন। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে বা রিকশায় চড়ে সহজেই যাওয়া যায় মং রাজবাড়ি।

 

ডিসি পার্ক

 

মানিকছড়ি উপজেলায় ১৪০ একর জায়গাজুড়ে সবুজের সমারোহ ও লেক নিয়ে বিস্তৃত পার্কটি। এর  প্রবেশ মুখের দৃষ্টিনন্দন গেট মনকাড়ে দর্শনার্থীর। বিস্তৃত এ পার্কে দৃষ্টির চারিদিকে চোখজুড়ানো নানান প্রজাতির সবুজ অরণ্য। উঁচু-নিচু ভূমি সমৃদ্ধ পার্কের শোভা বাড়িয়েছে দৃষ্টিনন্দন তিনটি লেক। রাজধানী ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন বা আকাশপথে প্রথমে যেতে হবে খাগড়াছড়ি। সেখান থেকে বাস বা সিএনজিতে চড়ে মানিকছড়ি বাসস্ট্যান্ড। এরপর বাস বা সিএনজিতে চড়ে ডিসি পার্ক যেতে পারেন।

 

শতবর্ষী বটবৃক্ষ

 

পাঁচ একরের বেশি জায়গাজুড়ে বিস্তৃত প্রাচীন এক বটবৃক্ষ ইতিহাসের সাক্ষীর পাশাপাশি হয়ে উঠেছে দর্শনীয় এক স্থান। প্রকৃত বয়স না জানা এই বটবৃক্ষ ভ্রমণপিপাসুদের কাছে ধরা দিয়েছে আকর্ষণীয় এক উপাদান হিসেবে। এটি মাটিরাঙ্গা উপজেলাধীন খেদাছড়ার কাছাকাছি এলাকায় অবস্থিত। রাজধানী ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন বা আকাশপথে প্রথমে যেতে হবে খাগড়াছড়ি। সেখান থেকে বাসযোগে মাটিরাঙ্গা বাজার। সেখান থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে বা মোটরবাইকে চড়ে যাওয়া যায় শতবর্ষী বটবৃক্ষে।

 

তারেং

 

‘তারেং’ ত্রিপুরা ভাষা, এর অর্থ ‘উঁচু পাহাড়’। তাই পর্যটনরা তারেং বা উঁচু পাহাড়ে বসে উপভোগ করেন জুম খেত, কমলা-আনারস-সবজি বাগান ও খাগড়াছড়ির বুকে বয়ে চলা চেংগি নদী। পাশাপাশি বর্ষায় কখনো কখনো ডুব দেওয়া যায় মেঘের সমুদ্রে। সন্ধ্যা বা রাতে ঝিঁঝি পোকা সহ নানা জাতের পাখির ডাকাডাকি বা কলরব কেড়ে নেয় মন।

 

জলপাহাড়

 

বিনোদন পার্ক জলপাহাড়ের মূল আকর্ষণ বা বিনোদন ময়ুরপঙ্খী নৌকা ও নাগরদোলা। পাশাপাশি আনন্দিত করে খানিক হারিয়ে যেতে সাহায্য করে সুবিশাল লেক। এটি মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদরে অবস্থিত।